20 May 2024, 01:02 pm

দেশের ৬৪ জেলার ৬ শতাধিক থানা সিসি ক্যামেরার আওতায় আসছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : পুলিশের সেবা জনবান্ধব, হয়রানি বন্ধ, দুর্নীতিমুক্ত করা, পুলিশি কার্যক্রম মনিটরিং ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। দেশের ৬৪ জেলার সাড়ে ছয় শতাধিক থানা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।

থানায় বসে পুলিশ কী করছে, থানায় আসা লোকজনের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করা হচ্ছে, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে কি না, অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে মনিটরিং করাসহ থানা পুলিশের দৈনন্দিন কার্যক্রম আরও জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে ঢাকা রেঞ্জের আওতায় ১৩ জেলার ৯৬টি থানায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা রেঞ্জকে মডেল হিসেবে বেছে নিয়ে অন্যান্য রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটন থানায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম) রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত একটি আদেশে বলা হয়েছে, নিজ নিজ রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটন পুলিশের সেবা জনবান্ধব, হয়রানি বন্ধ, দুর্নীতিমুক্ত করা, পুলিশি কার্যক্রম মনিটরিং ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঢাকা রেঞ্জের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে তা অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

এ নির্দেশনা পেয়ে পুলিশের সব ক’টি রেঞ্জ থানাগুলোতে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে কার্যক্রম মনিটরিং করার উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা রেঞ্জের আওতায় ১৩ জেলার ৯৬টি থানায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা রেঞ্জকে মডেল হিসেবে নিতে অন্য রেঞ্জগুলোকে পুলিশ সদর দপ্তর চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক আদেশে বলা হয়েছে, পুলিশের অধীনে পরিচালিত জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে। থানায় মামলা, জিডি, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন বা যে কোনো ধরনের কাজে যে অর্থ দিতে হয় না, তা ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িতদের বিষয়ে কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে, তা যেন গোপন করা না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলছে পুলিশ।

চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, চোর-ডাকাত সম্পর্কে এলাকাবাসীকে ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য নিতে হবে। মোবাইল, ইন্টারনেট ও সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। স্থানীয় নাগরিক এবং ভাড়াটিয়াদের তথ্য যেন থানা পুলিশকে জানানো হয়, সে বিষয়ে এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগাতে স্থানীয়দের উৎসাহিত করতে হবে।

এলাকায় কোনো আগন্তুক এলে সঙ্গে সঙ্গেই তা থানা পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করতে বলা হয়েছে। মানুষ যাতে কোনো গুজবে কান না দেয়, সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। থানার কোনো পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে কেউ হয়রানি হলে সঙ্গে সঙ্গেই ওসি এবং উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাকে জানাতে পারবেন এলাকাবাসী। এলাকার যে সব ব্যক্তি বিদেশে আছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা কোনো সমস্যায় পড়লে থানা পুলিশ যেন অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তা সমাধানের চেষ্টা করে।
পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, এসপি অফিসের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সার্বিক বিষয়ে মনিটরিং করবেন। পুলিশের দুর্নীতি জিরো টলারেন্স দেখানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশের সব ক’টি থানা জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া সব ক’টি থানায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতেও বলা হয়েছে।

নির্দেশনা পেয়ে পুলিশের রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক, পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন। বিশেষ করে সব ক’টি থানায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এলাকার পাড়া-মহল্লায় যে সব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিশোর অপরাধীদের তালিকা করার পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা ও পুলিশের কর্মকা- নিয়েও কাজ করতে বলা হয়েছে। সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পর রেঞ্জ অফিস সরাসরি মনিটরিং করবে।

রেঞ্জ ডিআইজির অফিসের মাধ্যমে পুলিশ সদর দপ্তরও মনিটরিং করবে থানার কার্যক্রম। তা ছাড়া প্রতিদিন যে সব জিডি হচ্ছে, তা মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রায়ই অভিযোগ আসে, জিডি করতে আসার পর ভুক্তভোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়। এ সব ঘটনা যাতে না হয়, সে জন্য সিসি ক্যামেরার বিকল্প নেই।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, অপরাধীদের অপরাধের ধরন বদলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবর্তন আনা হচ্ছে পুলিশের নানা কার্যক্রমে। পুলিশই হবে জনগণের প্রথম ভরসার স্থল। পুলিশের মূল নীতির মধ্যে তিনটি হলো- দুর্নীতিমুক্ত পুলিশি সেবা, নিপীড়ন ও হয়রানিমুক্ত পুলিশি সেবা এবং পুলিশের বৃহত্তর কল্যাণ, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা বাস্তবায়ন। এ লক্ষ্য সামনে রেখেই আমরা কাজ করছি। রেঞ্জের প্রতিটি থানার কর্মকা- কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ডিএমপির অধীনে থাকা প্রতিটি থানাই সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ থানাতেই সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। কোনো থানায় ক্যামেরা নষ্ট থাকলে তা দ্রুত মেরামত করে সচল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে কারোর গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব থানার কর্মকা- ডিএমপির মনিটরিংয়ের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশ পেয়ে ঢাকা রেঞ্জের সব ক’টি থানাই সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। থানায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি মাদক কারবারি ও মাদকাসক্তদের বিষয়ে থানাকে অবহিত করতে এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে বলা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 4665
  • Total Visits: 753151
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1127

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২০শে মে, ২০২৪ ইং
  • ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ১১ই জ্বিলকদ, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, দুপুর ১:০২

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
20212223242526
2728293031  
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018